Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

চরাঞ্চলের বসতবাড়িতে নিবিড় সবজি চাষ

চরাঞ্চলের বসতবাড়িতে নিবিড় সবজি চাষ
ড. মোঃ শামীম হোসেন মোল্লা১ ড. মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস২ ড. মোঃ আল-আমিন হোসেন তালুকদার৩
বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো ক্রমাগতভাবে শুকিয়ে বা তলানি পড়ে যে চর তৈরি হচ্ছে, তাতে গড়ে উঠছে অসংখ্য বসতবাড়ি। চরাঞ্চলে শাকসবজি ও ফলমূলের উৎপাদন ও প্রাপ্যতা দুই-ই কম। ফলে এখানকার মানুষ নানাবিধ পুষ্টিহীনতার শিকার। অথচ পরিকল্পিতভাবে আবাদ করলে পুষ্টিকর, নিরাপদ এবং টাটকা শাকসবজি ও ফলমূলের সহজলভ্য ও উত্তম উৎস হতে পারে এ বসতবাড়ি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীগণ দীর্ঘদিন থেকে বসতবাড়িতে ফসল উৎপাদনে বৈজ্ঞানিক ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘রংপুর চর মডেল’ উদ্ভাবন করা হয়। এই মডেলে একটি বসতবাড়িকে ১০টি উৎপাদনক্ষম স্থানে ভাগ করে প্রতিটি স্থানের জন্য উপযোগী ফসল নির্বাচন করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বছরব্যাপী চাষ করা হয়।
চরাঞ্চলের বসতবাড়ির উৎপাদনযোগ্য স্থানসমূহ ও ফসলবিন্যাস
বসতবাড়ির সম্ভাব্য ১০টি উৎপাদনযোগ্য স্থানের প্রতিটির পরিমাণ বাড়ির আঙ্গিনার আকার অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে। এমনকি উৎপাদন স্থানের সংখ্যাও বাড়িভেদে কম বেশি হতে পারে। আর এ সমস্ত স্থানের ফসল কৃষকের পছন্দ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
উন্মুক্ত স্থান
বাড়ির আঙ্গিনার উৎপাদনযোগ্য রৌদ্রোজ্জ¦ল খোলামেলা সুনিষ্কাশিত উঁচু জায়গা নিবিড় সবজি চাষ করার জন্য উপযোগী। এ স্থানে ১ মিটার প্রস্থ এবং ৩-৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে পাঁচটি বেড পাশাপাশি বা সামনাসামনি তৈরি করে নিম্নের বিন্যাস অনুসরণে সারা বছর সবজি চাষ করা হয়।
বেড়া
গরু, ছাগল, হাস-মুরগি ইত্যাদির ক্ষতি হতে উন্মুক্ত স্থানের বেডের সবজি ও অন্যান্য ফসল রক্ষা করার জন্য বেড়ার ব্যবস্থা করে তাতে সবজি উৎপাদনে বিন্যাস হলো শিম/করলা-ঝিঙা/বরবটি-করলা। উন্মুক্ত স্থানের বেড়ার ভেতরে চতুর পাশে প্রতি ১.৫ মিটার অন্তর অন্তর মাদা তৈরি করে তাতে লতানো সবজির বীজ লাগাতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে বর্ষাকালে পানি না জমে।
মাচা  
মাচার সবজি বিন্যাস হলো লাউ/শিম-মিষ্টি কুমড়া/ধুন্দুল/ চিচিঙ্গা। বসতবাড়িতে অনেক জায়গায় ফাঁকা পড়ে থাকে যেখানে কোন কিছু করা যায় না যেমন-ঘরের আশে পাশের ফাঁকা জায়গা, পুকুরপাড়, বাড়ির ঢাল ইত্যাদি যেখানে পর্যাপ্ত রোদ পড়ে এমন জায়গায় মাচা তৈরি করা যেতে পারে। চরাঞ্চলের বসতবাড়ি যেহেতু আকস্মিক বড় বন্যায় ডুবে যেতে পারে সেহেতু বস্তার মাটিতে বীজ বা চারা লাগানো যেতে পারে। এজন্য প্লাস্টিকের বস্তায় অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক কম্পোস্ট মিশিয়ে তাতে লতানো সবজি উৎপাদন করলে বন্যার সময় প্রয়োজনে বস্তাসহ গাছ উপড়ে উঠিয়ে মাচায় ঝুলিয়ে দেয়া যায়।
বাড়ির ঢাল
চরাঞ্চলের বসতবাড়ি প্রায়ই আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়ে থাকে। কাজেই বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য বসতভিটা যথেষ্ট উচু করতে হয়। এ কারণে চরাঞ্চলে প্রায় বাড়িতেই দেখা যায় বসতভিটার চারদিকে ঢাল থাকে। এ ঢালকে ফেলে না রেখে পরিকল্পিতভাবে নাপিয়ার ঘাস আবাদ করলে বাড়ির ঢাল অধিক স্থায়ী হবে, পাশাপাশি উৎপাদিত হবে গৃহপালিত পশুর উত্তম গোখাদ্য। এছাড়া এ স্থানে লতানো সবজি লাউ-মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন করা যেতে পারে।
ঘরের চাল
বসতবাড়িতে নানান ধরনের ঘরের চালা থাকে যেমন- থাকার ঘর, রান্না ঘর, গোয়াল ঘর, কম্পোস্ট পিটের চালা ইত্যাদি। এ সমস্ত ঘরের চালা ক্রমান্বয়ে লাউ/শিম-চালকুমড়া/মিষ্টি কুমড়া সবজি চাষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। চারা গাছকে লম্বা কোন বাউনির সাহায্যে চালায় তুলে দিতে হবে। চালা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ছোট গাছের ডাল বা পাটখড়ি দিয়ে হালকা চালের উপর বাহন তৈরি করে দিতে হবে।
স্যাঁতসে্যঁতে স্থান
টিউবওয়েল বা ট্রেডল পাম্প (পা চালিত যন্ত্র) এর পানি ব্যবহার করার সময় সেই পানি গড়িয়ে যে জায়গায় পড়ে তার আশেপাশে সব সময় ভেজা ও স্যাঁতসে্যঁতে থাকে। পরিকল্পিতভাবে সেখানে পানি কচু/লতি কচু চাষ করা সম্ভব।
অফলা গাছ
বসতবাড়িতে বিদ্যমান বিভিন্ন অফলা গাছ যেমন জিগা, বাবলা, মাদার ইত্যাদি গাছের গোড়া হতে পৌনে ১ মিটার দূরে মাদা তৈরি করে অফলা গাছকে বাউনি হিসাবে ব্যবহার করে মৌসুম ভেদে বিভিন্ন সবজি যেমন: শিম-ঝিঙা, দেশি শিম-ধুন্দল অথবা গাছআলু-চিচিঙ্গা ইত্যাদি ফসল বিন্যাস অনুযায়ী চাষ করা যায়।
আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান  
বসতবাড়িতে বিদ্যমান বড় গাছের নিচে, মাচার নিচে বা ঘরের পেছনে যেখানে ভালোভাবে সূর্যের পূর্ণ আলো পৌঁছায় না, সেখানে ছায়া সহনশীল সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল যেমন- ওল কচু, মৌলবী কচু, মানকচুু, আদা, হলুদ, মিষ্টি আলু, বহুবর্ষী মরিচ ইত্যাদি উৎপাদন করা যায়।
বাড়ির সীমানা
বসতবাড়ির চারিদিকের সীমানা প্রায়ই অলক্ষ্যে পতিত অবস্থায় পরে থাকে। এ স্থানে কিছু কিছু সবজি ও স্বল্প মেয়াদি ছোট ক্যানপি বিশিষ্ট ফল গাছ লাগিয়ে অনায়াসেই দীর্ঘ দিন সবজি ও ফল উৎপাদন করা যায়। যেমন- পেঁপে, মাল্টা, লেবু, পেয়ারা কুল, বড়ই ইত্যাদি। এ ছাড়া এ স্থানে তুলসী, কালমেঘ, গন্ধভাদালী ইত্যাদি ঔষধি গাছের পাশাপাশি এক কোনায় এক ঝাড় চিবানো জাতের আখ লাগানো যেতে পারে।
বাড়ির পেছনের পরিত্যক্ত স্থান
বসতবাড়ির পেছনে কিছু পরিত্যক্ত জঙ্গলময় স্থান থাকে যা তেমন কোন কাজে আসে না। এ ধরনের জায়গায় বড় আকারের ফল ও সবজি গাছ লাগিয়ে তা থেকে প্রতি মৌসুমেই কিছু বাড়তি ফসল পাওয়া যেতে পারে। যেমন -সজিনা, লাইজনা, কাঁচকলা, সুপারি, আম ইত্যাদি।
বসতবাড়ির ফসল উৎপাদনে অন্যান্য পরিচর্যা
  বসতবাড়ির বিভিন্ন জৈব উচ্ছিষ্ট (শাকসবজি বা মাছ-মাংসের উচ্ছিষ্ট, পশুপাখির মলমূত্র, বাড়ি ঘরের আবর্জনা, আশেপাশের আগাছা) পচিয়ে তৈরি ক¤েপাস্ট সার ব্যবহার করে শাকসবজি উৎপাদন করলে রাসায়নিক সার তেমন একটা লাগে না।
    চরাঞ্চলের বসতবাড়িতে সেচ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। বাড়ির রান্নার কাজে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত পানি অর্থাৎ সবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত পানিও সেচের কাজে ব্যবহার করা উওম। স্বল্প মূল্যের ট্রেডেল পা¤প (পা চালিত সেচযন্ত্র) বসিয়ে নিলে খাবার পানির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সেচ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা সম্ভব।
    খরার সময় মাদা বা বেডে খড়ের জাবরা প্রয়োগ করলে খরা মৌসুমে গাছকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
    সবজি বাগান ও এর চার পাশে সবসময়ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যাতে করে রোগ পোকা বাসা বাঁধতে না পারে।
    বসতবাড়ির সবজি বাগানে পোকামাকড় দমনের জন্য যতটা সম্ভব ঔষধ প্রয়োগ না করা ভালো। তাই আক্রমণের শুরুতে পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলে, আক্রান্ত ডগা ও ফল সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলে, বিষটোপ/আকর্ষক ফাঁদ ব্যবহার করে এবং প্রয়োজনে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে সহজেই পোকামাকড় দমন করা যায়।
    সবজি বাগানে যেন ছায়া সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজনে ছায়া সৃষ্টিকারী গাছের কিছু ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে।
বসতবাড়িতে শাকসবজির বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ  
চরাঞ্চলে শাকসবজির বীজ সহজলভ্য নয়। তাই বসতবাড়িতে স্থিতিশীল সবজি বাগানের জন্য চাষি পর্যায়ে বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রয়োজন। বীজ সংগ্রহ করার জন্য রোগপোকা মুক্ত সুস্থ সবল গাছ আগে থেকেই নির্বাচন করে রাখতে হবে। শাকজাতীয় সবজির ক্ষেত্রে গাছ পরিপক্ব হলে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। ফলজাতীয় সবজির ক্ষেত্রে পূর্বেই নির্বাচিত গাছ থেকে সুস্থ সবল পুষ্ট ও বড় আকারের পরিপক্ব ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরিষ্কারের পর ৫-৬ দিন ধরে আলো-ছায়া রোদে অল্প অল্প করে ভালোভাবে শুকাতে হবে। রোদে শুকানো বীজ ঠা-া করে বোতলে/ পলিথিনসহ টিনের পাত্রে ভরে শক্তভাবে পাত্রের মুখ এটে রাখতে হবে যাতে পাত্রে বাতাস ঢুকতে না পারে।
বসতবাড়িতে শাকসবজি উৎপাদনে পরিবারের সদস্যগণই সুবিধা মোতাবেক শ্রম দিয়ে থাকে। এতে বছরব্যাপী উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খাওয়া ও বিতরণ বাদে অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে বছরে দুই হাজার টাকার বেশি নিট আয় করা সম্ভব। বসতবাড়ির বিভিন্ন জৈব উচ্ছিষ্ট পচিয়ে তৈরি ক¤েপাস্ট সার ব্যবহার করে শাকসবজি উৎপাদন করলে খরচ কম হবে এবং গুণগতমান বৃদ্ধির ফলে বেশি দামে বিক্রি করে বেশি টাকা আয় করা যেতে পারে। এ ছাড়া বসতবাড়ির সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তার পাশাপাশি, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ ও সবল জীবনযাপন সম্ভব।

লেখক : ১এসএসও, সগবি, বিএআরআই ২এসএসও, সগবি, বিএআরআই, ৩পিএসও, সগবি, বিএআরআই, রংপুর, মোবাইল : ০১৭১৭৮৩৭৮১৮, ই-মেইল : ংধসরসসড়ষষধ@মসধরষ.পড়স

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon